মনোহরগঞ্জ উপজেলা
তৎকালীন মেল্লা শহর বর্তমান লাকসামস্থ ঘাগরিয়া খালের পাড়ে অবস্থিত মেল্লারের দিকে খরস্রোতা নদী পথে যেতে ডাকাতিয়া নদী ও ঘাগরিয়া নদীর মোহনায় ব্যবসায়ীদের মনোহরণকারী স্থান হিসেবে মনোহরগঞ্জের নামকরণ হয় মর্মে কথিত আছে। পাট ব্যবসায়ীক কেন্দ্রস্থল মনোহরগঞ্জ পরবর্তীকালে গঞ্জে রূপান্তরিত হয় মর্মে অনেকে মনে করেন। কারো-কারো মতে মনোহর নামে একজন মৃৎশিল্প/কুম্বকার এনে গড়ে তোলে ছিলেন হাড়ি-পাতিলের কারখানা। ব্যবসায়ীরা তার নামকে ঐতিহ্য হিসেবে স্থানের নামকরণ করেন মনোহরগঞ্জ। ঐতিহাসিক সত্যতা যাই হোক না কেন, মনোহরগঞ্জ একটি মনমুগ্ধকর প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ীক স্থান যাহা ০৩ (তিন)টি ইউনিয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। এই উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম-জলিপুর,পোমগাঁও,মান্দার গাঁও পিয়ারাতলি,ডাবুরিয়া, হাট বাজারের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বাজার হলো লক্ষণপুর বাজার,পোমগাঁও বাজার,নরহরি পুর বাজার ও খিলা বাজার । ঐতিহ্যবাহী খিলা রেল স্টেশন যা ১৯৫০সালে তৎকালীন ছাত্রদের উদ্দোগে প্রতিষ্ঠিত হয়।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিগত ২৬ আগষ্ট ২০০৪ তারিখ নিকার এর ৯০তম বৈঠকে ১১টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নামে একটি নতুন প্রশাসনিক উপজেলা গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অতঃপর ০৫/০২/২০০৫ তারিখ হতে মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা (কুমিল্লা জেলা) আয়তন: ১৬৬.৫০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০৪´ থেকে ২৩°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৯´ থেকে ৯১°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে লাকসাম উপজেলা, দক্ষিণে চাটখিল, সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী উপজেলা, পূর্বে নাঙ্গলকোট উপজেলা, পশ্চিমে শাহরাস্তি উপজেলা (চাঁদপুর)।
জনসংখ্যা ২১০৮১০; পুরুষ ১০৩৪০৭, মহিলা ১০৭৪০৩।
জলাশয় ডাকাতিয়া নদী ও মেল্লার খাল।
প্রশাসন লাকসাম উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ২০০৫ সালে মনোহরগঞ্জ উপজেলা গঠিত হয়।
উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
– ১১ ১৪৬ ১৬০ – ২১০৮১০ ১২৮৯ – ৪৮.৭৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উত্তর ঝলম ৪২ ৩১৯২ ১০৩৭৬ ৯৭৭২ ৫৪.২৩
উত্তর হাওলা ৯৪ ৪২৭৫ ১০১০৯ ১০৯৬৩ ৫১.৬৭
খিলা ৯১ ৩৮৭৩ ৯২২৮ ৯৯৫৬ ৫১.৩৯
দক্ষিণ ঝলম ৪৫ ৩৫৪৯ ৯৮১০ ১০০১৩ ৪৭.২২
নাথের পেটুয়া ৭০ ৩২১৪ ৮৮৪৮ ৯০৮২ ৫০.০৭
বাইশগাঁও ১৩ ৪৫৪৫ ১০২৪৭ ১১০৬৪ ৪৩.০০
বিপুলাসার ৭৩ ৩৪১৮ ৯১৩৯ ৮৬৯৬ ৪২.৩৯
মৈশাতুয়া ৩৮ ৪২৮৯ ৯৮৪৭ ১০৪৩৫ ৪৭.৬৭
ণলক্ষ্মণপুর ৫৯ ২৮৮৮ ৭৫২৫ ৮০৪২ ৫৩.৪৬
সরসপুর ৮২ ৪৪০১ ১০০২৮ ১০৬১৩ ৫০.৬৬
হাসনাবাদ ১৪ ৩২৫৪ ৮২৫০ ৮৭৬৭ ৪৪.৪৩
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ধিকচান্দা মঠ বাড়ীর মঠ, মিয়া সাহেবের দরগাহ সংলগ্ন নরহরিপুর দিঘি, শরীফপুর মাযার সংলগ্ন নাগেশ্বর দিঘি।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এ উপজেলায় হাসনাবাদ বাজারের উত্তরে চৌমুহনী নামক স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে প্রায় ৭০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (হাসনাবাদ)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান শাহ শরীফপুর দরগাহ, চাঁদপুর দরগাহ, বড় মিয়া হুজুর দরগাহ, মিয়া সাহেবের দরগাহ, ধিকচান্দা মঠ, মৈশাতুয়া মহাপ্রভু সেবাশ্রম উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.৭৪%; পুরুষ ৫০.৩৮%, মহিলা ৪৭.১৯%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৬, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২, কিন্ডার গার্টেন ১৮, ব্র্যাক স্কুল ৪২, মাদ্রাসা ১৫।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা, ভূট্টা, আখ।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৫, গবাদিপশু ৩০, হাঁস-মুরগি ৩৫, হ্যাচারি ১৫, নার্সারি ৪০০।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯৩৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৬০ কিমি; রেলপথ ৩ কিমি; নৌপথ ১৪.০৩ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪, মেলা ১। মেল্লা বাজার, নদনার বাজার, লক্ষণপুর বাজার ও মনোহরগঞ্জ বাজার এবং বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৮, ক্লিনিক ৪।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪১ ও ১৯৬৮ সালের ঘুর্ণিঝড়ে এ উপজেলার ঘরবাড়ি, ফসল ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা। [আবুল কালাম আজাদ]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মনোহরগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।